পটেনশিয়াল আইটি https://www.potentialit.xyz/2023/06/mutual-fund-ki.html

মিউচুয়াল ফান্ড কী? যেভাবে Mutual Fund এ বিনিয়োগ করবেন

বর্তমানে মিউচুয়াল ফান্ড টাকা ইনভেস্ট করার জন্য সেরা মাধ্যম। কে না চায় তার টাকা দিন দিন বৃদ্ধি পাক। আর টাকা বাড়ানোর জন্য মানুষ সঞ্চয়পত্র, এফডিআর, জায়গা-জমি, স্বর্ণ কিংবা ব্যবসা বিভিন্ন খাতে বিনিয়োগ করে। 
মিউচুয়াল ফান্ড কী?
মিউচুয়াল ফান্ড হলো ঠিক তেমনি একটি মাধ্যম যার দ্বারা আপনার টাকা ১৫-৩০% হারে বাৎসরিক বৃদ্ধি করানো সম্ভব। যেখানে ব্যাংকে কিংবা সঞ্চয়পত্রে বিনিয়োগ করলে ৭-১০% এর মতো টাকা বৃদ্ধি পেতে পারে। তাহলে চলুন আমরা মিউচুয়াল ফান্ড সম্পর্কে বিস্তারিত জেনে নেই। 

মিউচুয়াল ফান্ড কি?

মিউচুয়াল ফান্ড অনেকের কাছে জটিল বিষয় মনে হয়। আমি এমনভাবে বুঝানোর চেষ্টা করবো যাতে আপনাদের সাথে সহজ মনে হয়। ধরুন আপনার কাছে ১০ লাখ টাকা আছে এবং আপনি শেয়ার মার্কেটে অথবা কোন ব্যবসায় টাকা খাটাতে চাচ্ছেন। 

কিন্তু সমস্যা হলো শেয়ার মার্কেট নিয়ে আপনার ধারণা নেই, ব্যবসায় লস হতে পারে! কি মুশকিল অবস্থা; তখন যদি কেউ অফার করে আপনার ১০ লাখ টাকা সে শেয়ার মার্কেটে খাটিয়ে আপনাকে ব্যাংকের দ্বিগুন লাভ দিবে? হ্যাঁ প্রায় একই জিনিস মিউচুয়াল ফান্ড করে থাকে। আমরা আরও গভীরে প্রবেশ করবো তবে আপাতত এইটুকু বুঝার চেষ্টা করুন। 

মূলত, বিপুল সংখ্যক বিনিয়োগকারীদের দ্বারা সঞ্চিত অর্থই একটি মিউচুয়াল ফান্ড গঠন করে। এই তহবিল একজন পেশাদার ফান্ড ম্যানেজার দ্বারা পরিচালিত হয়।

এটি এমন একটি ফান্ড যা একটি সাধারণ উদ্দেশ্যে বিভিন্ন বিনিয়োগকারীর কাছ থেকে অর্থ সংগ্রহ করে। এরপর ওই ফান্ড থেকে ফান্ড ম্যানেজার তার দক্ষতা ও অভিজ্ঞতা কাজে লাগিয়ে শেয়ারবাজারে তালিকাভুক্ত বিভিন্ন কোম্পানির শেয়ার, অর্থবাজারের বিভিন্ন পণ্য বা সেবা, সরকারি ও করপোরেট বন্ডে বিনিয়োগ করে। উদ্দেশ্য থাকে ফান্ডটির অর্থ বিভিন্ন জায়গায় বিনিয়োগ করে সর্বোচ্চ মুনাফা অর্জন করা।

নির্দিষ্ট কমিশন কেটে নেওয়ার পরে এই সমষ্টিগত বিনিয়োগ থেকে প্রাপ্ত আয়/লাভ বিনিয়োগকারীদের মধ্যে আনুপাতিকভাবে ভাগ করা হয়। একটি স্কিমের "নেট অ্যাসেট ভ্যালু বা এনএভি (NAV)" গণনা করে। সহজ কথায় বলতে গেলে, মিউচুয়াল ফান্ড সাধারণ মানুষের জন্য সবচেয়ে কার্যকর বিনিয়োগের বিকল্পগুলির মধ্যে একটি। কারণ এটি তুলনামূলকভাবে কম খরচে পেশাদার ফান্ড ম্যানেজারের মাধ্যমে সম্পদের সর্বোচ্চ বৃদ্ধি করতে সহায়তা করে।

মিউচুয়াল ফান্ডের সুবিধা কী কী?

মিউচুয়াল ফান্ডে বিনিয়োগ করে একজন সাধারণ বিনিয়োগকারী বেশ কিছু সুবিধা পেতে পারেন। সেগুলো হলো - 
  • দীর্ঘ মেয়াদে বিনিয়োগের ক্ষেত্রে নিয়ন্ত্রিত ঝুঁকি নিয়ে উচ্চ হারে চক্রবৃদ্ধি মুনাফার সুবিধা। 
  • কর রিবেট ও অন্যান্য সুবিধা। 
  • প্রাথমিক গণপ্রস্তাব বা আইপিও থেকে লাভবান হওয়া। এখানে বলে রাখা ভালো, মিউচুয়াল ফান্ডের জন্য আইপিওতে কোটাসুবিধা থাকে। আবার ফান্ড ম্যানেজাররা বুক বিল্ডিং পদ্ধতিতে অপেক্ষাকৃত কার্যকরভাবে অংশগ্রহণ করতে পারে।
  • সুলভে বিনিয়োগ ও ফান্ড ম্যানেজারদের পেশাগত দক্ষতা ও গবেষণা সেবা নিয়ে দীর্ঘ মেয়াদে লাভবান হওয়া। 
  • বেশিরভাগ ক্ষেত্রে ব্যাংকের চেয়ে বেশি রিটার্ন নিয়ে আসতে পারে Mutual Fund। তবে সব সময় আনবে এমনটিও ঠিক নয়। 
কিছু মিউচুয়াল ফান্ড রয়েছে, যেগুলো স্টক মার্কেটের অন্যান্য কোম্পানির স্টকের মতো কেনাবেচা করা যায়। এই সকল ফান্ডকে ক্লোজড এন্ড বা মেয়াদি মিউচুয়াল ফান্ড বলা হয়। 

আবার কোনো কোনো মিউচুয়াল ফান্ড সরাসরি ফান্ড ম্যানেজারের কাছ থেকে কিনতে বা বিক্রি করতে হয়। এ ধরণের ফান্ড ওপেন এন্ড বা বে-মেয়াদি মিউচুয়াল ফান্ড নামে পরিচিত। বাংলাদেশের পরিপ্রেক্ষিতে সাধারণ বিনিয়োগকারীদের জন্য ওপেন এন্ড বা বে-মেয়াদি মিউচুয়াল ফান্ডে বিনিয়োগ করাটা বেশি লাভজনক।

মিউচুয়াল ফান্ডে কিভাবে বিনিয়োগ করব?

বাংলাদেশে মিউচুয়াল ফান্ড এখনও অতটা জনপ্রিয়তা না পেলেও ধীরে ধীরে বাড়ছে। বর্তমানে অনেকেই SIP (Systematic Investment Plan) তে বিনিয়োগ করে থাকে। আরেকটি বিনিয়োগের ধরণ হলো Lumpsum Investment। এগুলো নিয়ে আমরা অন্য একদিন বিস্তারিত আলোচনা করবো। 

তবে এখানে আপনাকে সতর্ক থাকতে হবে। কারণ আপনার ফান্ড ম্যানেজার বা সম্পদ ব্যবস্থাপক যদি দক্ষ না হয় তাহলে লাভ হবে না। কাজেই প্রথমে বাংলাদেশে থাকা মিউচুয়াল ফান্ড এর ট্র্যাক রেকর্ড পর্যালোচনা করুন। প্রায় সকল Mutual Fund ওয়েবসাইটে গেলে সহজে পেয়ে যাবেন।

বিগত বছরগুলোতে কোন ফান্ড ম্যানেজার বা সম্পদ ব্যবস্থাপক কত % রিটার্ন দিতে পেরেছে দেখুন। আমি আগেই বলেছি সব সময় আপনি ১০-৩০% রিটার্ন পাবেন এমনটি ভাবা যাবে না। কোন কোন বছর বেশি আবার কোন কোন বছর অনেক কম রিটার্ন আসবে। 

তবে আপনাকে একটি টোটকা বলে দেই। অন্তত ৩ বছরের গড় হিসাব করুন। বিগত ৩ বছরে যে ফান্ড ম্যানেজার বেশি রিটার্ন দিতে পেরেছে তার কাছে আপনি যেতে পারেন। তবে বাংলাদেশ স্টক এক্সচেঞ্জে নিবন্ধিত নয় এমন কোথাও ভুলেও ইনভেস্ট করবেন না।

বাংলাদেশে থাকা বিভিন্ন মিউচুয়াল ফান্ড সম্পর্কে বাংলাদেশ সরকারের এই ওয়েবসাইটে বিস্তারিত তথ্য পাবেন। এখান থেকে সব ফান্ডের নাম ও তাদের রেকর্ড সম্পর্কে জানতে পারবেন। আশা করি পরিস্কার ধারণা পাবেন। তাও বুঝতে সমস্যা হলে আমাদেরকে কমেন্ট করে জানান। আমরা সকল তথ্য একসাথে দিয়ে দেওয়ার চেষ্টা করবো। 

মিউচুয়াল ফান্ড কি হালাল?

মিউচুয়াল ফান্ড আসলে হালাল ও হারাম দুই ধরণের রয়েছে। এখানে যদি সুদের (বা মুনাফা) পরিমাণ পূর্ব নির্ধারিত থাকে তবে এটি হারাম। তবে আপনি লাভ-লস উভয় দায় বহন করলে তা হালাল। 

তাছাড়া বাংলাদেশে প্রায় সকল মিউচুয়াল ফান্ড শরিয়াহভিত্তিক বিনিয়োগের ব্যবস্থা চালু করেছে। এই ক্ষেত্রে তারা আপনার টাকা হালাল বিজনেসে বিনিয়োগ করবে এবং তার একটি লভ্যাংশ আপনাকে দিবে। কাজেই আপনি শরিয়াহভিত্তিক ফান্ডে বিনিয়োগ করতে পারেন। 

শেষ কথা - মিউচুয়াল ফান্ড কী?

আপনি যদি শেয়ার মার্কেট সম্পর্কে ধারণা না রাখেন তবে আপনার টাকা মিউচুয়াল ফান্ডে রাখলে একজন ফান্ড ম্যানেজার তা শেয়ার মার্কেটে খাটিয়ে আপনাকে লাভ এনে দিবে। এক্ষেত্রে ফান্ড ম্যানেজারকে শেয়ার বাজার সম্পর্কে সম্যক অবহিত থাকতে হয়। 

বন্ধুদের সাথে শেয়ার করুন

এখনি কমেন্ট করুন

0 জন কমেন্ট করেছেন

দয়া করে কমেন্ট নীতিমালা পড়ুন emoji

পটেনশিয়াল আইটি কী?